ফটিকছড়িতে সিসা তৈরির গোপন কারখানা, ঝুঁকিতে খাগড়াছড়ির রামগড় সীমান্তের কাছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে একটি গোপন কারখানায় পুরোনো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হচ্ছে।
রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় আশপাশের এলাকা। এতে বাতাসে বিষাক্ত পদার্থ মিশে যায়, যা শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।” এই নির্গত কালো ধোঁয়া ও অ্যাসিডের তীব্র গন্ধে স্থানীয় বাসিন্দারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। পাশাপাশি, বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাবে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন দৈনিকের প্রতিবেদনে জানা গেছে, ফটিকছড়ির বাগানবাজার ইউনিয়নের পশ্চিম বলিপাড়ায় জনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটি বাগানের ভেতরে টিনের বেড়া দিয়ে ঘেরা কারখানাটিতে পুরোনো ব্যাটারি এনে রাতের আঁধারে পোড়ানো হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কারখানার চারপাশে সার্বক্ষণিক তালাবদ্ধ গেট থাকায় কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না। দিনের বেলা কারখানাটি নিষ্ক্রিয় থাকলেও রাত ১০টার পর শুরু হয় কাজ।
এই অবৈধ কারখানার কারণে আশপাশের বাসিন্দারা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন। স্থানীয় আশরাফুল ইসলাম দৈনিক আজকের বাংলা কে বলেন,”দিনে অ্যাসিডের ঝাঁজ, রাতে কালো ধোঁয়া—সব মিলিয়ে বসবাস করা কষ্টকর হয়ে উঠেছে। প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি।”
আরেক বাসিন্দা আহম্মদ খোকন বলেন, “রাত ১০টা থেকে ভোর পর্যন্ত কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় আশপাশের এলাকা। এতে বাতাসে বিষাক্ত পদার্থ মিশে যায়, যা শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।”
বিপুল পরিমাণ পুরোনো ব্যাটারি স্তূপ করে রাখা হয়েছে। দুটি চুলায় কয়লার আগুনে ব্যাটারির ভেতরের প্লেট পোড়ানো হয়, যার ফলে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। ব্যাটারি থেকে বের করা অ্যাসিড আশপাশের এলাকায় ফেলা হচ্ছে, যা মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে এবং পানির উৎস দূষিত করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এবিএম মোজাম্মেল হক দৈনিক আজকের বাংলা প্রতিনিধি জসিম তালুকদার কে বলেন, “ব্যাটারি পোড়ানোর ফলে নির্গত ধোঁয়া মানুষের শ্বাসযন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে ফুসফুস, মস্তিষ্কসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হতে পারে, এমনকি দীর্ঘমেয়াদে ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায়।”
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, কারখানার মালিক চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাটের ব্যাটারি ব্যবসায়ী সাদেক হোসেন। স্থানীয় জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তির জমিতে তিন মাস আগে কারখানাটি স্থাপন করা হয়।
রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতা আফরিন দৈনিক আজকের বাংলা পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি জসিম তালুকদার কে বলেন, “কারখানাটি ফটিকছড়ি উপজেলায় অবস্থিত হওয়ায় বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনকে অবহিত করেছি। ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, “কারখানার বিষয়ে আগে জানা ছিল না। বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত বন্ধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবৈধ কারখানার কার্যক্রম বন্ধ না হলে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে।
মন্তব্য করুন