আজকের বাংলা ডেস্ক
২৪ এপ্রিল ২০২৫, ৩:১৬ অপরাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর দখল-দূষণ দেখে হতাশ দুই উপদেষ্টা, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস

কক্সবাজার শহরের প্রধান নদী বাঁকখালীর দখল-দূষণের ভয়াবহ চিত্র দেখে হতাশা প্রকাশ করলেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং নৌপরিবহন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট পয়েন্টে নেমে প্যারাবন নিধন করে তৈরি করা অবৈধ বসতবাড়ি, দোকানপাট, পোলট্রি ফার্ম, চিংড়িখামার, আবাসনের জন্য নির্মিত প্লট দেখেন দুই উপদেষ্টা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, পুলিশ সুপার মো. সাইফুদ্দিন শাহিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন, বিআইডব্লিউটিএ, বন বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা।

সেখান থেকে দুই উপদেষ্টা যান নদীর পেশকারপাড়া অংশে। সেখানেও দখল–দূষণের ভয়াবহ দৃশ্য দেখেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নদীর তীরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুই উপদেষ্টা। উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নদীর অর্ধেকের বেশি জায়গা দখল হয়ে গেছে। শত শত অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। নদীর জায়গা নদীকে ফেরত দিতে হবে। নৌবন্দরের জায়গাও থাকতে হবে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, দখল–দূষণে বাঁকখালী নদী এখন মৃতপ্রায়। অবৈধ স্থাপনা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। অনেকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আছেন। আবার নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। নদী বাঁচাতে সবকিছু করা হবে।

স্থানীয় লোকজন বলেন, গত এক বছরে কস্তুরাঘাট এলাকায় অন্তত ৩০০ একরের প্যারাবনের লাখো কেওড়াগাছ ধ্বংস করে তৈরি করা হয়েছে চার শতাধিক পাকা-আধা পাকা ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। দুই যুগ আগে নদীর ওই অংশে প্যারাবন সৃজন করেছিল জাপানের একটি সংস্থা। কস্তুরাঘাটের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পেশকারপাড়া, মাঝিরঘাট এবং পশ্চিম-উত্তর দিকে ছয় নম্বর জেটিঘাট, ফিশারীঘাট, নুনিয়াছটা পর্যন্ত আরও কয়েক কিলোমিটার নদীর তীর দখল করে তৈরি হয়েছে আরও ছয় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা।

বন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ১ বছরে নদীর ৬ কিলোমিটারের অন্তত ৬০০ একরের প্যারাবন ধ্বংস করে ১ হাজার ২০০টির মতো অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে। তাতে পাখির আবাসস্থল, মৎস্যসম্পদ-জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে। প্যারাবনের জলাভূমি বেচাবিক্রি করে ইতিমধ্যে ১২০টি স্থাপনার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় পাঁচটি চক্রের শতাধিক ব্যক্তি। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে উৎপত্তি হয়ে ৩৪ কিলোমিটারের নদীটি রামু ও কক্সবাজার সদর হয়ে শহরের কস্তুরাঘাট নুনিয়াছটা দিয়ে বঙ্গোপসাগরে মিশেছে।

পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা বলেন, আড়াই বছর আগে নদীর ওপর প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়। তখন থেকে ভূমিদস্যুদের নজর পড়ে সেতুর দুপাশের প্যারাবনের দিকে। দখল-দূষণে দেড় মাইল প্রস্থের নদীটি সংকুচিত হয়ে এখন (সেতুর গোড়ার অংশ) ২০০ ফুটের কাছাকাছি এসে ঠেকেছে। তাতে নৌচলাচল ব্যাহত হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ও ১ মার্চ অভিযান চালিয়ে কস্তুরাঘাটের চার শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জেলা প্রশাসন। তখন দখলমুক্ত করা হয় বাঁকখালী নদীর ৩০০ একরের বেশি প্যারাবনের জমি। কিন্তু কিছুদিনের মাথায় উচ্ছেদ করা প্যারাবনে আবার নির্মিত হয়েছে চার শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাটসহ নানা স্থাপনা। অনেকে টিনের বেড়া দিয়ে শত শত একর জলাভূমি ঘিরে রেখেছেন।

গত বছরের ২৩ মে জেলা প্রশাসনের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভা। তাতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান সারোয়ার মাহমুদ বিএস দাগ অনুসরণ করে নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, সীমানা নির্ধারণ এবং দখলদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তবে এখন পর্যন্ত কিছুই হয়নি।

শহরে প্রতিদিন উৎপন্ন হয় ৯৭ টনের বেশি বর্জ্য। এর মধ্যে ৭০ টন বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। অবশিষ্ট বর্জ্য সাগরে চলে যাচ্ছে। বছরের পর বছর বর্জ্য ফেলার কারণে নদীর বুকে এখন ময়লার পাহাড় জমেছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এখনো ময়লা–আবর্জনা ফেলছে। শহরের কোথাও ময়লা ফেলার ডাম্পার স্টেশন নেই। সরেজমিনে নদীর বুকে কয়েকটি বর্জ্যের পাহাড় দেখতে পান দুই উপদেষ্টা।

বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে নদীর দখল-দূষণ নিয়ে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিআইডব্লিউটিএ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করবেন দুই উপদেষ্টা। সেখানে নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

পোপকে শ্রদ্ধা জানাতে ভ্যাটিকানের সেন্ট পিটার্স বাসিলিকায় প্রধান উপদেষ্টা

নতজানু বিসিবির ‘নৈতিক’ পরাজয়

পোপের শেষকৃত্যে কারা যোগ দিয়েছেন

১৫ বছর দুদকের ‘নিষ্ফল’ তদন্ত

রাঙামাটিতে অটোরিকশা-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ৫

কোটালীপাড়ায় অগ্নিকান্ডে ১০ দোকান পুড়ে ছাই

গাজীপুরে দুই কোটি টাকার ডাকাতি: র‍্যাবের অভিযানে গ্রেফতার-৩

বাঁশখালীর লবণ মূল্য বৃদ্ধির দাবি, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে ছাত্র জনতার অবস্থান

বার কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান ধান ও চালের মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার: খাদ্যসচিব

ভাঙ্গা-কুয়াকাটা ৬ লেন মহাসড়ক বাস্তবায়ন দাবিতে পটুয়াখালীতে সংবাদ সম্মেলন

১০

বাঁশখালীতে সালমান পুত্রের হাত থেকে এখনো দখলমুক্ত হয়নি উপকূলীয় বনভূমি

১১

গাজায় আবারও রক্তগঙ্গা, একদিনে প্রাণ গেল ৬০ ফিলিস্তিনির

১২

পাকিস্তান-ভারতকে ‘সর্বোচ্চ সংযম’ দেখাতে বলল জাতিসংঘ

১৩

কাতার থেকে ভ্যাটিকানে গেলেন প্রধান উপদেষ্টা

১৪

কারখানায় গ্যাস সরবরাহে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করবে সরকার: প্রেস সচিব

১৫

পটুয়াখালীতে বিগত সরকার সরকারি অর্থায়নে করেছে অসংখ্য খাল ভরাটের পরিবেশ বিনাশী প্রকল্প

১৬

রাজনীতিতে ইলিয়াস কাঞ্চন: ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’-এর যাত্রা শুরু

১৭

৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম: পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা বাতিল করল ভারত

১৮

বিশ্বব্যাংক থেকে ৮৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ, দুটি প্রকল্পে বাংলাদেশকে সহায়তা

১৯

জাতীয় নির্বাচনে ইসিকে সহায়তা করতে চায় অস্ট্রেলিয়া

২০